শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
আমি কেন বারবার আসামি হচ্ছিঃ সরদার বেলায়েত হোসেন মুকুল বড়াইগ্রামে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত চাকুরীবিধি অমান্য করে শিক্ষককে বরখাস্ত ও হয়রানি  মধ্যরাতে উত্তাল ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্টে, হত্যা মামলায়, নওয়াব হাবিবুল্লাহ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গ্রেফতার* তারেক রহমানের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে: ডা. ইরান মরহুম বিএনপি নেতা লাল মিয়া মেম্বারের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে ১০ হাজার লোকের সমাগম : দোয়া ও মোনাজাত  বড়াইগ্রামে সাবেক এমপি’র ব্যাক্তি মালিকানা স্কুলে সরকারি বরাদ্দ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন দক্ষিণখানে রাস্তাও ড্রেনের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনকালে :  ডিসেম্বরে শেষ হবে দক্ষিণখান-উত্তরখানের প্রধান সড়কের উন্নয়ন কাজ: ডিএনসিসি’র প্রশাসক পাচাররোধে সীমান্তে নজরদারি : ভারতে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ : তিন মাসে ট্যাক্স আদায় হয়েছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সলেমানের ব্যাটারি বিহীন ভ্রাম্যমান সোলার !

মোঃ আবুল হাসান ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মো. সলেমান আলী। ছিলেন একজন সামান্য বাইসাইকেল মেকার। মেধা ও শ্রম দিয়ে তিনি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে তৈরি করেছেন ব্যাটারি বিহীন ভ্রাম্যমান সোলার পাওয়ার। তার তৈরিকৃত গাড়ির মতো সোলারের এই প্যানেল গুলো খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় এবং সোলার প্যানেল বোর্ডটি সূর্য্য যেদিকে থাকে সেই দিকে স্বংয়ক্রিয়ভাবে ঘুরতে থাকে। আর এ ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের মাধ্যমে স্বল্প খরচে ক্ষেতখামারে সেচ দিতে পেরে উপকৃত হচ্ছে এলাকার শত শত কৃষক।

সলেমান আলী’র এমন  জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্ভাবন এলাকায় ব্যাপক সুনাম ও সারা জাগিয়েছে।

জানা যায়, ল১৯৯৮ সালে সাইকেলের মেকারি ছেড়ে এলজিইডির কাছ থেকে সৌর বিদ্যুতের ৭৫ ওয়াটের একটি প্যানেল ও ব্যাটারি কিনে গবেষনা শুরু করেন সলেমান আলী। গবেষনার এক পর্যায়ে ২০১৪ সালে ব্যাটারি বিহীন ভ্রাম্যমান ৩০০ ওয়াটের সোলার পাওয়ার তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে তার নিজস্ব ১৫টি ব্যাটারি বিহীন ভ্রাম্যমান সোলার পাওয়ার আছে।

২০১৫ সালে মাছের রেনু উৎপাদনের খামার তৈরি করে এই সোলার পাওয়ারের মধ্যমে পানি দেন। এছাড়াও এর মাধ্যমে তার নিজস্ব মাছ চাষের বড় বড় ৯টি পুকুর ও আবাদি জমিতে সেচ দিয়ে থাকেন। তাতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার চাষিদেরও উপকার করছেন তিনি।

সলেমানের ভ্রাম্যমান সোলার পাওয়ার দিয়ে স্বল্প খরচে এলাকার ৩টি ফসলি মাঠের ক্ষেতখামারে সেচ দিতে পেরে প্রায় তিন’শ কৃষক উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

মোলানী গ্রামের কৃষক আইদুল ইসলাম বলেন, ‘সলেমানের তৈরি ব্যাটারি বিহীন সোলার গাড়ির মাধ্যমে আমি ক্ষেতে সেচ দেই। এই সোলার গাড়ির মতো হওয়ায় ইচ্ছে মতো যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়। এতে কোন তেল বা বিদ্যুৎ লাগে না ও বিদ্যুৎ বা তেল চালিত পাম্প বা মেশিন দিয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে একবিঘা জমিতে ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা খরচ হয়। আর সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিতে এর অর্ধেক খরচ হয়।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘বর্তমানে  জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। বিদ্যুৎ ও ঠিক মতো থাকেনা। তাই কৃষকরা চাষাবাদ করতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকদের দু:খ-কষ্ট লাঘবে এলাকার সলেমান আলীর ভ্রাম্যমান সোলার পাম্পের মাধ্যমে এলাকার প্রায় তিন শতাধিক কৃষক উপকৃত হচ্ছে। সোলারের মাধ্যমে সেচ দিতে আমাদের অনেক সাশ্রয় হচ্ছে ও ধানের ফলনও ভালো হচ্ছে।,

শুধু তাই নয় সলেমান এখন সোলার প্যানেল দিয়ে ডিজিটাল ব্রীজ স্কেল, বাড়িতে লাইট, ফ্যান, টিভি এমনকি দিনের সূর্য্যের আলোয় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করে নিজে চলাফেরা করার জন্য মোটরবাইক তৈরি করেছেন। এছাড়াও তিনি নিজে সোলার প্যানেল দিয়ে ব্যাটারি বিহীন ভ্রাম্যমান সোলার পাওয়ার, আইপিএস ও ব্যাটারি তৈরি করে বিক্রয় করে বেশ আয় করছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে এমন আয় করে বর্তমানে তিনি দোতলাবাড়ি, ট্রাক্টরসহ অনেক জায়গা জমির মালিক।

এলাকায় ব্যাটারি বিহীন ভ্রাম্যমান সোলার পাওয়ারের মাধ্যমে ক্ষেতে সেচ দিয়ে বছরে আয় করেন চার লাখ টাকা ও মাছের রেনু উৎপাদান খামার থেকে ৮-১০ লাখ এবং পুকুরের মাছ বিক্রয় করেন ৭-৮ লাখ টাকার বলে জানান, সলেমানের ছেলে সোহেল রানা।

সোহেল রানা বলেন, ‘কৃষকরা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ চালিত পাম্প বা মেশিনের অর্ধেক খরচে সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিতে পেরে ও সলেমানের এমন উদ্ভাবন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয়সহ অনেক দূরদুরান্ত থেকে মানুষ এসে তাদের তৈরি সোলার পাওয়ার, আইপিএস ও ব্যাটারি ক্রয় করে নিয়ে যান অনেকে।,

স্থানীয় বাজারে বাইসাইকেল মেরামত করার কাজ করতাম। নিজের অর্থ সম্পদ বলতে কিছুই ছিলনা ও একবেলা খাবার জুটলে আরেক বেলা জুটতো না সলেমানের সংসারে। কিন্তু বর্তমানে তিনি সফল ও অনেক স্বাবলম্বী বলে বলেন মো. সলেমান আলী।

মো. সলেমান আলী বলেন, ১৯৯৮ সালের দিকে প্রথমে বাতাশ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য অনেক পরিশ্রম করি ও তাতে সফলও হই কিন্তু পরে এইদিকে বাতাস বা হাওয়া তেমন না থাকায় সেরকমভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো না। তাই সেটি বাদ দেই। পরে প্রথমে ৭৫ ওয়াটের সোলার প্যানেল নিয়ে গবেষণা শুরু করি কিভাবে বিদ্যুৎ ও  জ্বালানি সাশ্রয় করা যায়। একদিন গাড়িতে রংপুরে যাওয়ার সময় এক ব্যাক্তি বাসের মধ্যে সৌরবিদ্যুতের বই বিক্রি করছিল ওই বইটি আমি ২ টাকা দিয়ে কিনে নেই। আর সেই বই থেকে জানতে পারি যে, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বোর্ডটি সূর্য্যের দিকে তাক করে রাখলে অনেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তখন বই থেকে ধারণা নিয়ে আমি সেই ভাবে কাজ শুরু করি ও সূর্য্যের আলোয় শুধু সোলার প্যানেল বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সফল হই।

এইভাবে ৭৫ থেকে ১ হাজার, ১ হাজার ওয়াট থেকে ৩৩০০ ওয়াট সোলার প্যানেলের বোর্ড তৈরি করি ২০১৪ সালে। এই সোলার প্যানেল বোর্ডটি এমনভাবে তৈরি করি যে, সূর্য্য যেদিকে থাকে সেই দিকে স্বংয়ক্রিয়ভাবে ঘুরতে থাকে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আমি মাছের পোনা উৎপাদনে সেচ, পুকুরে সেচ ও ১৫টি ভ্রাম্যমান সোলার পাম্পের মাধ্যমে এলাকার ১০০ একর জমির ক্ষেতখামারে সেচ দিয়ে থাকি।,

তিনি আরও বলেন, ‘এক একর জমিতে ডিজেল চালিত মেশিন দিয়ে তেল খরচ হয় ৫০ লিটার এখন বিনা তেলে ১৫টি সোলার পাম্প দিয়ে একশ একর জমিতে সেচ প্রদান করে জ্বালানি সাশ্রয় করছেন সলেমান। এমনকি তার বাড়িতে কোন বিদ্যুতের খরচ নেই ও মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন খুলে রেখে তিনি সোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করে সেই বাইকটি চালান এবং আস্তে আস্তে করে আজ এতো দুর এসেছেন বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com